কবি শেখ ফজলল করিম
নীতিবাদী সাহিত্যসাধক কবি শেখ ফজলল করিমের জন্ম ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল কালীগঞ্জের কাকিনা গ্রামে। তাঁর মাতার নাম কোকিলা বিবি। পিতামহ জসমত উল্লাহ সরদার ছিলেন জমিদার শম্ভুরঞ্জন রায় চৌধুরীর একজন বিশ্বস্থ কর্মচারী। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শেখ ফজলল করিম দ্বিতীয় ছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় ১৯০৮ সালে কাকিনা থেকে প্রকাশিত হয় ‘বাসনা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা। তৎকালে এ পত্রিকা ভূয়সী সুনাম অর্জন করেছিল। অতঃপর ১৯৩০ সালে শিশুদের জন্য ‘জমজম’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – তৃষ্ণা, মানসিংহ, এসবাত-ইস-ছামী বা ছামী তত্ত্ব, পরিত্রান, ভগ্নবীণা, লাইলী মজনু, মহর্ষী এমাম রব্বানী মুজাদ্দেদ আলফেসনী (রহঃ), আফগানিস্থানের ইতিহাস, পথ ও পাথেয়, চিন্তার চাষ, বিবি রহিমা, রাজর্ষী এবরাহীম, বিবি খাদিজা, বিবি ফাতেমা সহ আরও অনেক গ্রন্থ।
‘স্বর্গ ও নরক’ শীর্ষক কবিতাখানি লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন ।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহু দূর,
মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি-প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়ে ঘরে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে সাহিত্যবিশারদ (১৯১৬) এবং কাব্যরত্নাকর (১৯১৭) উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্য রাতে কাকিনায় নিজ বড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাড়ির সম্মূখে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
কাজী শেখ রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ – শিক্ষাবিদ, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক
১৮৮৩ সালের জানুয়ারী মাসে কালীগঞ্জের দলগ্রাম ইউনিয়নের কাজী পরিবারে কাজী শেখ রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী শেখ মুহম্মদ জয়েন উল্লাহ এবং মাতার নাম ফুল বিবি। তিনি একাধারে একজন লাঠিয়াল, শিক্ষাবিদ, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং সমাজ সচেতন সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি স্যার সৈয়দ আমীর আলী রচিত ‘শর্ট হিস্ট্রি অব দি স্যারাসেনস’ গ্রন্থের সার্থক অনুবাদ করেছিলেন। তিন খন্ডে অনুবাদকৃত গ্রমহটি ‘আরব জাতির ইতিহাস’ নামে প্রকাশিত হয় যথাক্রমে প্রথম খন্ড ১৯১০ সালে, দ্বিতীয় খন্ড ১৯১২ সালে এবং তৃতীয় খন্ড ১৯১৫ সালে। বাংলা একাডেমী ১৯৭১ সালে গ্রন্থটির তিন খন্ড একত্রে প্রকাশ করে। তাছাড়া তিনি ১৮৯৬ সালে লন্ডন ও আলীগড় থেকে প্রকাশিত Sir Thomas Walker Arnold রচিত The Preaching of Islam গ্রন্থটি অনুবাদ করে এর নাম দেন ‘ইসলাম প্রচারের ইতিহাস’। তার রচিত উপন্যাস ‘মালেকা’ ১৯২০ খ্রিস্টব্দে প্রকাশিত হয়। কাজী শেখ রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ একজন লাঠিয়াল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ লাঠিয়াল সমিতির সভাপতি ছিলেন। দেশ বিভাগের পর এ সমিতির নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান লাঠিয়াল বাহিনী। প্রায় ২০ হাজার লাঠিয়াল এ বাহিনীর সদস্য ছিল। পাকিস্তান সরকার তাকে ‘তমঘা-ই মজলিস’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭২ সালের ২৫ জুন তিনি মারা যান।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস