লালমনিরহাট জেলা সম্পর্কে যে স্বল্প পরিমাণ ইতিহাস পাওয়া যায় তা থেকে জানা যায় যে, লালমনিরহাট জেলার অন্তর্ভূক্ত অঞ্চলসমূহ প্রাচীন ‘প্রাগজ্যোতিষপুর’ বা ‘কামরুপ’ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল । পঞ্চদশ শতাব্দীত কামতাধিপতি হিসেবে ’খেন’ বংশের গোড়াপত্তন ঘটে এবং কামরুপ রাজ্য অভিহিত হতে থাকে কামতাপুর হিসেবে । ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ এর মৃত্যুর পর কামতাপুর রাজ্যে কোচ জাতি শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং বিশু নামক জনৈক কোচ সরদার সমগ্র কামতা রাজ্য দখল করে অত্র অঞ্চলে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান এবং “কোচবিহার” রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে মোঘল আক্রমণের পূর্ব পর্যন্ত লালমনিরহাট সহ গোটা রংপুর অঞ্চল কোচবিহার রাজ্যের অংশ ছিল । ১৬৮৭ সালে কাকিনা অধিকারের পর সুবাদার শায়েস্তা খান এর পুত্র এবাদত খান এখানে মোঘলদের স্মরণে একটি হাট প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম রাখা হয় মোঘলহাট যা সদর উপজেলায় অবস্থিত ।
১৭৬৫ সালে রংপুর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠিত হয় যা পূর্ণতা লাভ করে ১৭৮১ সালে । ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি কৃষকনেতা নুরুলদীনের নেতৃত্বে বৃটিশদের বিরুদ্ধে কৃষক বিদ্রোহে তাঁর অন্যতম সহযোগী লালমনি নিহত হন । ধারনা করা হয় যে, লালমনির নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয় ‘লালমনিরহাট’। স্থায়ী পুলিশ বাহিনী গঠনের নিমিত্তে ১৭৯৩ সালে সমগ্র রংপুর অঞ্চলকে ২১ টি থানায় এবং পরে ১৮০৯ সালে আরও ৫ টি থানা বাড়িয়ে মোট ২৬ টি থানা গঠন করা হয় যেখানে লালমনিরহাট জেলার বর্তমান আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধা উপজেলা ভূক্ত অঞ্চল নিয়ে ‘ফুরুনবাড়ী’, বর্তমান সদর উপজেলা ও কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা ভূক্ত অঞ্চল নিয়ে ‘বড়বাড়ী’ ও বর্তমান পাটগ্রাম উপজেলা ভূক্ত অঞ্চল নিয়ে ‘পাটগ্রাম’ নামক থানা গঠন করা হয় ।
শাসন কার্যের সুবিধার্থে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের ফলে ১৮৬৯ সালে “জলপাইগুড়ি” জেলা গঠিত হয় যার ফলে পাটগ্রাম থানা জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভূক্ত হয় । ১৮৯৯ সালে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১৯০১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর কুলাঘাট থানাকে বিলুপ্ত করে বর্তমান লালমনিরহাট সদর উপজেলাভূক্ত অঞ্চলকে লালমনিরহাট থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। লালমনিরহাট পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৭২ সালের ২০ শে জানুয়ারি।
১৯৭৯ খ্রিস্টাবাদের ১৮ই ডিসেম্বর এক গেজেটের মাধ্যমে রংপুর জেলার ৪টি মহকুমা ভেঙ্গে ৫টি মহকুমা গঠন করা হয় । ফলে দেশের ৭১তম মহকুমা হিসেবে লালমনিরহাট মহকুমার জন্ম হয় । লালমনিরহাট মহকুমার অধীনে ৫টি থানা ছিল-লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম ।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের নীতি অবলম্বনে ১৯৮২ সালের ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় এবং থানাকে উপজেলায় রুপান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু জেলা গঠনের জন্য প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে লালমনিরহাট এর নাম বাদ পড়ায় লালমনিরহাটকে জেলায় উন্নীতকরণের দাবিতে আব্দুল কাদের ভাষানী, কমরেড শামসুল হক, আবুল হোসেন, কমরেড চিত্তরঞ্জন দেব, রেয়াজ উদ্দীন (ভোলা) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় । ফলস্বরুপ ১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ড: শাফিয়া খাতুন কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে লালমনিরহাট বাংলাদেশের একটি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
লালমনিরহাট জেলার জেলা প্রশাসকের প্রথম কার্যালয় ছিল ডায়াবেটিক সমিতি, লালমনিরহাট এর বর্তমান কার্যালয় স্থলে। প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন জনাব মনজুরুল ইসলাম । ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় বর্তমান মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের স্থলে । ১৯৮৮ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তা পুনরায় স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমান স্থলে আসে। ১৯৯০ সালের ১৭ই জানুয়ারি নবনির্মিত কালেক্টরেট ভবন তথা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস